প্রাণিসম্পদ প্রষিক্ষণ কোর্স

প্রান্তিক খামারিরা প্রাণিসম্পদ পালনে প্রশিক্ষণের অভাবে কিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়?

প্রশিক্ষণের অভাবে

বাংলাদেশের প্রান্তিক খামারিরা প্রাণিসম্পদ পালনে প্রশিক্ষণের অভাবে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, যা সরাসরি তাদের আর্থিক অবস্থা, উৎপাদনশীলতা এবং খামারের টেকসই উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করছে। নিচে বিশদভাবে আলোচনা করা হলো:


১. অজ্ঞতাজনিত ভুল সিদ্ধান্ত

  • অসঠিক প্রজাতি নির্বাচন:
  • স্থানীয় জলবায়ু ও সম্পদের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ গরু বা মুরগি পালন (যেমন: উচ্চ উৎপাদনশীল বিদেশি জাতের গরু যার জন্য অতিরিক্ত যত্ন প্রয়োজন)।
  • ভুল খাদ্য ব্যবস্থাপনা:
  • প্রাণীর বয়স ও জাত অনুযায়ী পুষ্টির চাহিদা না জেনে খাদ্য প্রদান, ফলে ওজন বৃদ্ধি বা দুধ উৎপাদন কম হয়।

২. রোগ-প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় ব্যর্থতা

  • প্রতিষেধকের অভাব:
  • ক্ষুরারোগ, গলাফুলা, নিউমোনিয়া ইত্যাদি রোগের টিকা দিতে না পারায় অকালে প্রাণী মৃত্যু (২০-৩০% ক্ষতি)।
  • স্বাস্থ্যবিধি অজানা:
  • খামারে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব, যা পরজীবী (যেমন: কৃমি) ও সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।

৩. অর্থনৈতিক ক্ষতি

  • খাদ্যের অদক্ষ ব্যবহার:
  • পুষ্টিগুণ বিবেচনা না করে খাদ্য দেওয়ায় ৩০-৪০% বেশি খরচ হয়।
  • চিকিৎসা ব্যয় বৃদ্ধি:
  • রোগ হলে অদক্ষ চিকিৎসক বা ওষুধের অপচয় (যেমন: অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার)।

৪. উৎপাদনশীলতা হ্রাস

  • দুগ্ধ উৎপাদন কম:
  • প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত খামারিরা গাভী প্রতি ১০-১৫ লিটার দুধ পেলেও অপ্রশিক্ষিতরা ৫-৮ লিটার পান।
  • মাংসের বৃদ্ধি ধীর:
  • মোটাতাজাকরণে ৬ মাস সময় লাগলে, সঠিক প্রশিক্ষণে ৪-৫ মাস-এ সম্ভব।

৫. বাজারজাতকরণে দুর্বলতা

  • মূল্য সংযোজন অজানা:
  • দুধ থেকে দই, পনির বা মাংস প্রসেসিং করে বেশি দামে বিক্রি করতে না পারা।
  • বাজার সম্পর্কে জ্ঞানের অভাব:
  • ঈদ বা কোরবানির সময়ে গরুর সঠিক দাম না জানায় ১০-২০% কম মূল্যে বিক্রি।

৬. সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত

  • প্রশিক্ষণ সনদ না থাকায়:
  • প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর (DLS) বা এনজিওদের কাছ থেকে ঋণ, ভ্যাকসিন বা বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ পাওয়া যায় না।
  • সাবসিডি অ্যাপ্লাই করতে অক্ষম:
  • যেমন: গাভী ক্রয়ে ২০% অনুদান (প্রান্তিক খামারিদের অনেকেই এই তথ্য জানেন না)।

৭. পরিবেশগত ঝুঁকি

  • বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাব:
  • গোবর ও মূত্র সঠিকভাবে ব্যবহার না করলে মিথেন গ্যাস ও দূষণ বৃদ্ধি পায়।
  • জলাবদ্ধতা ও দুর্গন্ধ:
  • অপরিকল্পিত শেড ডিজাইনের কারণে খামারে রোগজীবাণু বংশবৃদ্ধি করে।

প্রান্তিক খামারিদের জন্য সমাধান

১. মোবাইল-ভিত্তিক প্রশিক্ষণ: ইউটিউব, ফেসবুক লাইভ বা SMS-এর মাধ্যমে সহজ ভাষায় তথ্য প্রদান।
২. স্থানীয় সম্প্রসারণ কর্মী: প্রতি ইউনিয়নে একজন করে প্রাণিসম্পদ বিশেষজ্ঞ নিয়োগ।
৩. সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব: BRAC, CARE-এর মতো সংস্থার মাধ্যমে কমিউনিটি ট্রেনিং আয়োজন।
৪. ভিজিএফ/ভিজিডি প্রকল্পের অন্তর্ভুক্তি: গরিব খামারিদের বিনামূল্যে গরু/মুরগি ও প্রশিক্ষণ দেওয়া।


ক্ষতির পরিমাণ (উদাহরণ)

বিষয়প্রশিক্ষিত খামারিঅপ্রশিক্ষিত খামারিক্ষতির পরিমাণ
গাভী প্রতি বার্ষিক দুধ উৎপাদন৩,০০০ লিটার১,৮০০ লিটার১,২০০ লিটার (≈ ৬০,০০০ টাকা)
গরু মোটাতাজাকরণ সময়৪ মাস৬ মাস২ মাস অতিরিক্ত খরচ
রোগে মৃত্যুর হার৫%২৫%২০% বেশি ক্ষতি

চূড়ান্ত বার্তা

“প্রশিক্ষণের অভাবে প্রান্তিক খামারিরা শুধু অর্থই হারান না, সম্ভাবনাও হারান।
সরকার, এনজিও এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের সমন্বয়ে প্রশিক্ষণের প্রসার ঘটালে এই ক্ষতি কমানো সম্ভব।”

Leave a Reply